ঈদের ছুটি, লকডাউন আর ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এক সপ্তাহ কনটেইনারজটে পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কর্মতৎপরতায় আগের মতো কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং জাহাজীকরণ বেড়েছে। আর রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়ায় কনটেইনার সরবরাহে গতি এসেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ড এবং বেসরকারি ডিপোগুলোয় কনটেইনার চাপ কমতে শুরু করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটি ও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও পুরোপুরি চালু ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। এতে স্বাভাবিক সময়ের মতো জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং চলছে। গত রোবরাব বন্দরের জেটিগুলোতে ৯টি কনটেইনারবাহী জাহাজ থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। একই সময়ে বহির্নোঙরের ৪২টি জাহাজ থেকে আমদানি পণ্য খালাস হয়েছে। আর জেটি খালি হলেই ভিড়ছে নতুন জাহাজ। ঈদের আগে লকডাউন না থাকায় কনটেইনার সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও ঈদের দিন থেকে তা মারাত্মক হারে কমে যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন। আর ঈদের ছুটি ও লকডাউনের প্রভাব পড়েছে বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহে। এ সময়ে (ঈদের পরদিন অর্থাৎ ২০ থেকে ২৫ জুলাই রোববার সকাল পর্যন্ত) মাত্র আমদানি পণ্যবোঝাই এক হাজার ৭২০টি কনটেইনার খালাস হয়। অথচ স্বাভাবিক সময়ে দিনে চার হাজার পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাস হয়। এ কারণে বন্দর ইয়ার্ডে সপ্তাহের ব্যবধানে ছয় হাজার ১৩২টি কনটেইনার বেড়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত ৪২ হাজার কনটেইনার বন্দরে পড়ে ছিল। যদিও চট্টগ্রাম বন্দরে ২ আগস্ট বন্দর ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬৮৭ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। এর পরের দিন মঙ্গলবার চার হাজার ৪৬০ কনটেইনার সরবরাহ হয়।
অন্যদিকে ১৯টি অফডক তাদের সংকট কাটিয়ে আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থার দিকে ফিরছে। যদিও এসব অফডকগুলো আগে শতভাগ রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং করত। আর বন্দরে জট কমাতে সব ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে সরিয়ে নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে এনবিআর। এখন প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ টিইইউএস রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জাহাজীকরণের মাধ্যমে অফডক থেকে খালি হচ্ছে। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ডিপোগুলোতে মোট কনটেইনার ছিল ৫৫ হাজার ৯৭৫ একক। এর মধ্যে রপ্তানিবাহী কনটেইনার ছয় হাজার ৫০০ একক, আমদানিবাহী ১২ হাজার ৯৯৬ একক এবং খালি কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৪৭৯ একক; যা ৩১ জুলাইয়ে ছিল ৫৬ হাজার ৭৬০ টিইইউএস। এর মধ্যে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ১১ হাজার ৪৪টি, আমদানি পণ্যবাহী ১১ হাজার ৫৯০টি এবং ৩৪ হাজার ১২৬টি খালি কনটেইনার ছিল। অথচ কিছুদিন আগেও এ চিত্র ছিল পুরো উল্টো। প্রতিদিনই বেড়েই চলছিল রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার। কিন্তু সে হিসাবে জাহাজীকরণ সম্ভব হচ্ছিল না।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, চলতি সপ্তাহে কনটেইনার পরিবহন গতিশীল হয়েছে। এর মধ্যে শিপিং এজেন্টরা রপ্তানি পণ্যের নতুন কনটেইনার বুকিং নেয়া শুরু করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ আগে যেখানে ১১টি জাহাজ বার্থিং হতো সেটি বাড়িয়ে ১২টি করেছে এবং একই সঙ্গে কলম্বোগামী জাহাজকে অগ্রাধিকার বার্থিং দিচ্ছে। পাশাপাশি লকডাউন ও ঈদ ছুটি কাটিয়ে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে ফিরেছে। এসব কারণে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জাহাজীকরণ বেড়েছে। এছাড়া চলতি মাসে সরকারের গণটিকা কার্যক্রম শেষ হলে আরও গতিশীল হবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি অফডকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, এখন ডিপোগুলোতে কনটেইনারের চাপ নেই। এর মধ্যে রপ্তানি কনটেইনারও ভালোই জাহাজীকরণ হয়েছে। মূলত শিপিং এজেন্টরা রপ্তানি পণ্যের নতুন কনটেইনার বুকিং নেয়া, বন্দর কর্তৃপক্ষ আগে যেখানে ১১টি জাহাজ বার্থিং দিত সেটি বাড়িয়ে ১২টি করেছে এবং একই সঙ্গে কলম্বোগামী জাহাজকে প্রায়োরিটি বার্থিং দিচ্ছে। এসব কারণে আসলে কনটেইনার চাপ কমেছে। আমাদের ডিপোগুলো আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার কনটেইনার রাখা যাবে।